মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মেদিনী মন্ডল আনোয়ার চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু নাছের লিমনের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার ঝুমুরের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুর উপজেলার মাওয়া চৌরাস্তায় পশ্চিম কুমারভোগ কবরস্থানে হতে মুন্সীগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ ইলিয়াস শিকদার, লৌহজং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর হোসাইন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাফিজুর রহমান মানিক ও পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) রফিকুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হাসান মাহমুদ, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেযারম্যান রিনা ইসলামের উপস্থিতিতে পুলিশ কবর হতে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
জানা যায়, মেদিনী মন্ডল আনোয়ার চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু নাছের লিমনের বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যার অভেযোগে আদালতে মামলা হয়। মামলায় আরেকজন আসামী করা হয়েছে শিক্ষক লিমনের পরকীয়া প্রেমিকা দিলরুবা আক্তারকে। মামলার পর হতে শিক্ষক লিমন পলাতক রয়েছে। লিমন একটি জাতীয় পত্রিকার লৌহজং প্রতিনিধি হিসেবেও কর্মরত রয়েছে। সে উত্তর মেদিনী মন্ডল গ্রামের ওহাব খার পুত্র।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মেদিনী মন্ডল আনোয়ার চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু নাছের লিমন প্রায় ১৬-১৭ বছর পূর্বে শ্রীনগরের সমষপুর গ্রামের জয়নাল খার মেয়ে তাহমিনা আক্তার ঝুমুরের সহিত কাবিননামার মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের সংসারে আনাছ (১৪) ও আহাদ (৭) নামে দুইটি পুত্র সন্তান রয়েছে। গত ৫-৬ বছর পূর্বে দিলরুবা আক্তার নামে এক নারীর সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে লিমন। তাদের এ অবৈধ সম্পর্ক জানাজানি হলে স্ত্রী তাহমিনা বিষয়টি লিমনকে জিজ্ঞাসা করলে তাকে প্রায়ই মারপিটসহ নানাভাবে অত্যাচার করতো লিমন। গত ২৪ জুলাই শিক্ষক লিমন তার পরকীয়া প্রেমিকা দিলরুবাকে নিয়ে তার বাড়িতে যায়। এ সময় স্ত্রী তাহমিনা দিলরুবাকে বাড়িতে থেকে চলে যেতে বললে লিমন ও দিলরুবা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এ সময় তারা তাহমিনার গলা টিপে শ^াসরোধ করে হত্যা করে। এরপর কাউকে কিছু না জানিয়ে অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন লোক নিয়ে রাত আড়াইটার দিকে পশ্চিম কুুমারভোগ কবরস্থানে লাশ দাফন করে। ঘটনার সময় লিমন ও তাহমিনার দুই পুত্র তাদের নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল।
এ দিকে স্বজনরা তাহমিনার মৃত্যু সংবাদ জানতে পেরে শিক্ষক লিমনের কাছে মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে তিনি কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এজাহারে আরও বলা হয় থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে নানা তালবাহানা শুরু করে। তাই আদালতের এ মামলা দায়ের করেছেন নিহত তাহমিনা আক্তার ঝুমুরের ভাই মো. কামরুজ্জামান খান। মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত-৬ এ দ.বি. ৩২০/৩০২/৩৪ ধারায় গত ১০ আক্টোবর একটি সিআর মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ৮১।
এ দিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরও জানা যায়, নিহত তাহমিনা আক্তার ঝুমুরকে যে মহিলারা দাফন-কাফনের জন্য গোসল করিয়েছে, তারা তাহমিনার গলায় কালো দাগ দেখতে পান। কৌশলে তারা ওই সময় মোবাইল ফোনে তাহমিনার গলার কালো দাগের ছবি তুলে রাখেন। এ থেকে বিষয়টি হত্যা বলেই মনে করছে বাদী পক্ষের লোকজন।
লৌহজং থানার অফিসার ইনচর্জি (ওসি) মো. আলমগীর হোসাইন জানিয়েছে, গত মাসে মামলাটি আদালত হতে থানায় আসে। রোবিবার দুপুরে আমিসহ জেরা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইলিয়াস শিকদার, লৌহজং থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাফিজুর রহমান মানিক ও পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) রফিকুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হাসান মাহমুদ, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেযারম্যান রিনা ইসলামের উপস্থিতিতে নিহত তাহমিনা আক্তার ঝুমুরের লাশ কবর হতে তুলে ময়না তদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।#